1. mamun.cox21@gmail.com : admin :
Title :
কালিয়াকৈরে আনসার ও ভি‌ডি‌পি একাডেমীতে স‌তেজকরণপ্রশিক্ষণওপুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান চকরিয়ায় থানায় হেফাজতে কম্পিউটার অপারেটরের রহস্যজনক মৃ-ত্যু সাংবাদিক সংসদ কক্সবাজার’র স্মরণ সভায় বক্তারা ডিএসকে-র উদ্যোগে পালংখালী উচ্চ বিদ্যালয়ে পরিবেশ সচেতনতামূলক বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত কক্সবাজারে পর্যটন উন্নয়নে প্রমোশনাল পরিকল্পনা কর্মশালার আয়োজন জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৫ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানসহ সকল কর্মসূচি স্থগিত পেকুয়ায় প্রবাসীর বাড়িতে দু’র্ধ’র্ষ চু’রি জুলাই স্মরণে কাল কক্সবাজারে প্রতীকী ম্যারাথন এনসিপির সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ “গোপালগঞ্জের ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত, কক্সবাজার এমন কিছু হবার সম্ভাবনা নেই রামু উপজেলার খুনিয়াপালং এর যুবদের নিয়ে প্রচারণা ও নাগরিক সাংবাদিকতা বিষয়ক রিফ্রেশার্স প্রশিক্ষণ সম্পন্ন

যেখানে থেমে যায় প্রসূতির শ্বাস, কোমর পানিতে ভেসে চলে লাশ

  • Update Time : Tuesday, July 1, 2025
  • 103 Time View

কক্সবাজারের উখিয়ার হলদিয়াপালং ইউনিয়নের পূর্ব খেওয়াছড়ি- একটি গ্রাম যেখানে যেন আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা থমকে আছে কালের গর্ভে। শত শত মানুষের বসবাস এ গ্রামে, কিন্তু নেই কোনো পাকা রাস্তা, নেই একটি সেতু। পাহাড়ি ঢলে ভেসে আসা থিমছড়ি খালই যেন এখানকার মানুষের জীবনের বড় বাধা।

বর্ষা এলেই সেই বাধা হয়ে ওঠে ভয়াবহ। বাঁশের সাঁকো ডুবে যায় পানিতে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে পুরো গ্রাম। নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজ, চিকিৎসা, শিক্ষা কিংবা জরুরি পরিস্থিতি- সবই পড়ে থাকে কষ্ট আর ঝুঁকির মধ্যে।

শুধু কথার কথা নয়; সাম্প্রতিক এক মৃত্যুর ঘটনাই যেন সব কিছু চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। গ্রামেরই বাসিন্দা মো. নুরুল হকের মৃত্যুর পর তার লাশ কবরস্থানে নিতে গিয়ে স্বজনদের কোমর পানির মধ্যে দিয়ে হাঁটতে হয়েছে দীর্ঘ পথ। বৃদ্ধা মায়ের চোখে জল, শিশুরা ভয়ে কাঁপছে- এই দৃশ্য অনেকের চোখে কান্না এনেছে।

স্থানীয় যুবক আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আমাদের গ্রামে কয়েক শতাধিক মানুষের বসবাস। ১৫ বছর ধরে এই দুর্ভোগ সহ্য করছি। ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যেতে পারে না। বৃষ্টি হলে ঘর থেকে বের হওয়াই যায় না। এখন লাশও কোমর পানিতে বইতে হয়। এটা কোনো সভ্য সমাজের চিত্র হতে পারে?’

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের জন্য একবার একটা সেতুর বরাদ্দ হয়েছিল। কিন্তু এলাকার এক প্রভাবশালী ইউপি সদস্য ও স্থানীয় কিছু নেতার কারসাজিতে সেই প্রকল্প সরিয়ে অন্য গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। আমরা যেন ভোট দিলেও সুবিধা পাই না।’

স্থানীয় বাসিন্দা আমেনা খাতুন, যিনি সাত মাসের গর্ভবতী, বলছিলেন, ‘একটু ব্যথা উঠলেই আমার আতঙ্ক লাগে- এই রাস্তা দিয়ে কীভাবে হাসপাতালে যাব? এখানে অ্যাম্বুলেন্স ঢুকবে না, সিএনজি ঢুকবে না, কাঁধে করে কেউ যদি না নেয়, তাহলে আমি বাচ্চা জন্ম দেওয়ার আগেই মরব।’

আরেক প্রবীণ ব্যক্তি, মাদ্রাসার শিক্ষক হাফেজ আবদুল খালেক বলেন, ‘ছাত্ররা বৃষ্টি হলে স্কুল-মাদ্রাসায় যেতে পারে না। খালের ওপারে থাকা শিক্ষার্থীরা কাঁদে- “হুজুর, আসতে পারছি না।” এটা কেমন দেশ যেখানে স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়েও আমরা ব্রিজের জন্য হাহাকার করি?’

স্থানীয় বৃদ্ধ রশিদ আহমদ বলেন, ‘আমার ছেলেবেলা কেটেছে বাঁশের সাঁকোতে হেঁটে, এখন বার্ধক্যে এসেও সেই সাঁকো পার হতে হয়। জীবন শেষের পথে, কিন্তু উন্নয়ন একবারও আমাদের দিকেই তাকায়নি।’

গর্ভবতী নারী আমেনা খাতুন বলেন, ‘প্রতিবার বৃষ্টি নামলে বুকের ভেতর কাঁপুনি ধরে- আজ যদি ব্যথা ওঠে, কীভাবে যাব হাসপাতালে? সন্তানের চেয়ে আগে আমি হয়তো খালে ডুবে যাব।’

স্কুলছাত্রী নুরজাহান বলেন, ‘স্কুলের ব্যাগে বই নয়, পানি ঢুকে। আমি যখন পড়তে যাই, তখন জুতা খুলে কোমর পানি পার হই। অন্যেরা শহরে গিয়ে পরীক্ষা দেয়, আমরা যেতে পারি না।’

যুবক হারুন বলেন, ‘মৃত মানুষকে শেষ বিদায় জানাতেও যদি কোমর পানিতে নামতে হয়, তাহলে জীবিতদের মর্যাদা কোথায়? এটা উন্নয়ন না, এটা অবহেলার অপমান।’

সবজি বিক্রেতা কাসেম বলেন, ‘বাজারে মালামাল নিতে গেলে এক হাতে ঝুঁকি, অন্য হাতে আল্লাহর নাম। রাস্তাও নাই, ভরসাও নাই। এত বছরের ভোটেও একটা সেতু জোটেনি।’

এলাকাবাসী বারবার আবেদন করেও কোনো সাড়া পায়নি বলে অভিযোগ করেছেন। একাধিকবার ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানানো হলেও তারা শুধু আশ্বাস দিয়েই থেমে গেছেন।

স্থানীয় যুবক হারুন বলেন, ‘আমরা চাই কোনো রাজনীতি না করে মানবিক দিক বিবেচনা করে এই গ্রামে অন্তত একটা পাকা সেতু ও রাস্তাঘাট হোক। এত মানুষ কষ্ট করছে, এটা আর মানা যায় না।’

এ অবস্থায় পূর্ব খেওয়াছড়ি গ্রামের মানুষরা উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তাদের দাবি, ‘আমরা রাজনীতি বুঝি না। আমরা শুধু বেঁচে থাকতে চাই, আমাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে চাই, রোগীকে হাসপাতালে নিতে চাই। সেজন্য শুধু একটা ব্রিজ আর রাস্তা চাই।’

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, ‘খেওয়াছড়ির মানুষের দুর্ভোগের বিষয়ে আমি অবগত হয়েছি। বিষয়টি অত্যন্ত মানবিক ও গুরুত্বপূর্ণ। যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় সাধারণ মানুষ যেভাবে কোমর পানিতে হাঁটছে, এমনকি লাশ বহন করতেও কষ্ট হচ্ছে- এটা খুবই দুঃখজনক। আমরা ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে এলাকা পরিদর্শনের নির্দেশ দিয়েছি।’

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 SetuTV
Site Customized By NewsTech.Com